বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪ , ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Dainik Provat

আজ ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আইন আদালত

প্রভাত রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৮ জুলাই ২০২৩

সর্বশেষ

আজ ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি সংগ্রহ

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’ আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিন সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড রুম ভবন উদ্বোধনও করবেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রদর্শনী করা হবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সুপ্রিম কোর্টে জাতির পিতা ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তথ্য চিত্র।

অনুষ্ঠানে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সাবেক বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবীরা উপস্থিত থাকবেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, স্মারকসৌধ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আরও বক্তব্য রাখবেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, স্তম্ভটির নির্মাণকাজ শেষ করে কারুকাজ ও রং লাগিয়ে উদ্বোধনের উপযোগী করা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল এ প্রস্তুতি। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বৈঠক হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন ও আপিল বিভাগের ওপরে বড়ে মিনারেও রং করা হয়েছে।

১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনের দিন জাতির পিতা যে স্থানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন সে স্থানটি স্মরণীয় করে রাখতে এ স্মারকসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে স্তম্ভটির নির্মাণকাজ শেষ করে কারুকাজ ও রং করে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

স্মারকসৌধে সংবিধানে স্বাক্ষররত এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বক্তৃতারত জাতির পিতার স্থিরচিত্র মুর্যাল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৬৯ জন আইনজীবীর নামের তালিকাও।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন দেশের মাটিতে ফিরে আসেন। পরদিন ১১ জানুয়ারি ‘দি প্রভিশনাল কনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। ওই আদেশের অনুচ্ছেদ ৯-এ উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে একটি হাইকোর্ট থাকবে, যা একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতি যারা সময়ে সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে।
ওইদিনই রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব কর্তৃক বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হাইকোর্ট। স্বাধীন বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের গোড়াপত্তন এভাবেই।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনে এসে শহীদ আইনজীবীদের নামফলক সংবলিত স্তম্ভ দেখতে না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তার সেই ইচ্ছার প্রতি সম্মান রেখে সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণে নির্মাণ হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’। একই স্মারক স্তম্ভে তার প্রতিকৃতির পাশাপাশি হাতে লেখা ’৭২-এর সংবিধান ও শহীদ আইনজীবীদের নামের তালিকা স্থান পেয়েছে।

রাষ্ট্রপতির ১১৪ নম্বর আদেশ অর্থাৎ ‘দি হাইকোর্ট অব বাংলাদেশ’ (সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) আদেশ দ্বারা রাষ্ট্রপতির ৫ নম্বর আদেশের কার্যকারিতা দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আসেন বঙ্গবন্ধু। সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণের যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানেই নির্মিত হয়েছে এ স্মারক স্তম্ভ।

উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমাদের সুপ্রিম কোর্ট, আজ আমাদের দেশে আইনের শাসন হতে চলেছে, তাদের আমাদের স্মরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে শহীদ আইনজীবীদের নামফলক দেখতে না পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে, আমি নিশ্চয়ই সুখী হতাম, যেমন পিজি হসপিটালে গিয়ে দেখি যে, এতজন ডাক্তারের নাম, যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের নাম লেখে ফলক করে রাখা হয়েছে। আমি সুখী হতাম বারের সদস্য ভাইয়েরা, যে যে সহকর্মীরা যারা শহীদ হয়েছেন—যদি এই সুপ্রিম কোর্টের গেটে এসে দেখতে পেতাম যে শহীদের নাম সেখানে লেখা রয়েছে।

উদ্বোধনের ৪৫ বছর পর ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো উদযাপন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট দিবস। এরপর থেকে প্রতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রথম কার্যক্রম শুরু করেছিল। এ দিনটি সরকারি ছুটি।

কিন্তু তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওইদিন ছুটি প্রত্যাহার করে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ‘দৈনিক কার্যতালিকা’ (কজ লিস্ট) প্রণয়ন করেন এবং ওই তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট দিবসে সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এসময় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অনেক আইনজীবী শহীদ হয়েছেন। এরমধ্যে ৬০ জনের বেশি আইনজীবীর নামের তালিকা রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে। এছাড়া আরও শহীদ আইনজীবীর নামের তালিকা সংগ্রহের জন্য দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে নোটিশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

জা. ই

সর্বশেষ

জনপ্রিয়